প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়। তেমনি একটি কার্যকর কৌশল হলো ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার (Business Discount Offer)। গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ থেকে শুরু করে বিক্রয় বাড়ানো, ব্র্যান্ড পরিচিতি গড়া, কিংবা স্টক ক্লিয়ার করার মতো নানা কারণে ব্যবসায়ীরা ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকেন। সহজ কথায়, ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার একটি শক্তিশালী মার্কেটিং কৌশল যা গ্রাহকদের আকর্ষণ করে এবং বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু ভুলভাবে ডিসকাউন্ট দিলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখেও পড়তে পারেন। তাই, ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার দেওয়ার আগে এর সঠিক নিয়ম, সময় এবং পদ্ধতি জানা জরুরি।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো- ডিসকাউন্ট কী, কেন ব্যবসায়ীরা এটি দেন, কখন দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়, কীভাবে ডিসকাউন্ট নির্ধারণ করবেন এবং কখন এটি সফল বা ব্যর্থ হয়।
ব্লগে যা থাকছে-
ডিসকাউন্ট বা মূল্যছাড় কী?
ডিসকাউন্ট হলো পণ্যের মূল মূল্য থেকে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ বা শতাংশ হ্রাস করা, যা গ্রাহককে পণ্য কিনতে উৎসাহিত করে। যেমন, আপনি যদি ১০০০ টাকার পণ্যে ১০% ডিসকাউন্ট দেন, তাহলে গ্রাহক সেটি কিনবেন ৯০০ টাকায়। এটি গ্রাহকদের প্রয়োজনের থেকে বেশি পণ্য কেনার জন্য উৎসাহিত করে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনার ব্যবসাকে এগিয়ে রাখতে পারে। ডিসকাউন্ট বিভিন্নভাবে দেয়া যেতে পারে-
- শতাংশ ভিত্তিক (Percentage Discount): যেমন- সকল পণ্যে বা নির্দিষ্ট পণ্যে ২০% ছাড়।
- নির্দিষ্ট মূল্য ছাড় (Flat Discount): যেমন নির্দিষ্ট পণ্যে ৫০ বা ২০০ টাকা ছাড়।
- বায় ওয়ান গেট ওয়ান (BOGO): একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি।
- নির্দিষ্ট সময়সীমা ভিত্তিক অফার: যেমন ‘এই সপ্তাহেই শেষ!’ বা ‘ঈদ অফার’ বা ‘সামার অফার’ বা ‘বাৎসরিক অফার’ ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে, এটি কেবল গ্রাহক আকৃষ্ট করার কৌশল নয়। বরং অনেক সময় ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য এই নীতির প্রয়োগ করা হয়!
ব্যবসায়ীরা কেনো ডিসকাউন্ট অফার করেন?
ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার শুধু বিক্রি বাড়ানোর জন্য দেয়া হয় না, এর পেছনে রয়েছে আরও কিছু বাস্তব কারণ-
১. বিক্রি বাড়ানো: ডিসকাউন্ট দেয়া মানেই কম দামে বেশি বিক্রি। কম লাভে হলেও অধিক বিক্রয়ের মাধ্যমে মোট আয় বেড়ে যেতে পারে, এই আশায় ডিসকাউন্ট অফার করা হয়।
২. পুরাতন স্টক ক্লিয়ার করা: যেসব পণ্য সময়মতো বিক্রি হচ্ছে না বা বিক্রি হবার সম্ভাবনা কম, সেগুলো ডিসকাউন্ট দিয়ে বিক্রি করা ভালো! এতে করে নতুন পণ্যের জায়গা হয় এবং নতুন মার্কেটিং শুরু করা যায়।
৩. গ্রাহক আকর্ষণ ও ধরে রাখা: ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার দিলে নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট হন এবং পুরাতন গ্রাহকেরা আরও নিয়মিত ভাবে ফিরে আসেন। মানে আপনার প্রতি গ্রাহকদের ব্র্যান্ড লয়্যালিটি বাড়ে!
৪. প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করা: প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম দামে পণ্য দিয়ে আপনি বাজারে টিকে থাকতে পারবেন। তাছাড়া, দিনশেষে আপনার পণ্যের দাম কেউ মনে রাখবে না, মনে রাখবে পণ্যের কোয়ালিটি!
৫. ব্র্যান্ড ভ্যালু গড়া: উৎসবকালীন ডিসকাউন্ট বা এক্সক্লুসিভ অফার আপনার ব্র্যান্ডকে মনে রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবসায় কখন ডিসকাউন্ট দিলে ভালো ফল পাবেন?
ব্যবসায় ডিসকাউন্ট কিন্ত সবসময় কার্যকর হয় না। সঠিক সময়ে ডিসকাউন্ট দিলে তা লাভজনক হতে পারে। নিচে কিছু ভালো সময়ের উদাহরণ দেয়া হলো, তবে আপনার ব্যবসার ধরনের উপর সেরা সময়টা নির্ভর করবে-
১. উৎসব মৌসুমে: ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ কিংবা ইংরেজি নতুন বছর, এই সময়গুলোতে গ্রাহকেরা বেশি কেনাকাটা করেন। ডিসকাউন্ট দিলে বিক্রি দ্বিগুণ হতে পারে। সহজে মাথায় রাখবেন, যে ইভেন্ট বা সময়ে মানুষ খরচের জন্য আলাদা বাজেট রাখে তখন তার সামনে ডেসকাউন্ট অফার করতে হবে।
২. সিজনাল ক্লিয়ারেন্স: গরমের অনেক পণ্য শীতে আর চলে না। আবার শীতের অনেক পণ্য গরমে চলে না। তাই সিজন শেষ হওয়ার আগে ডিসকাউন্ট দিয়ে স্টক শেষ করুন। এটা ভালো ডিসকাউন্ট অফারের কৌশল।
৩. নতুন পণ্য লঞ্চের আগে: বছরের উপর পড়ে থাকা পুরোনো স্টক ক্লিয়ার করতে ডিসকাউন্ট দিন। এতে নতুন পণ্য জায়গা পায় ও ব্যবসার ক্যাশ ফ্লো ঠিক থাকে। এবার নতুন পণ্য নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন!
৪. সেলস ড্রপ বা অফ-সিজনে: যখন কোন কারণে বিক্রি কমে যায়, তখন ডিসকাউন্ট দিয়ে বেচাকেনায় গতি ফেরানো যায়।
পণ্যের দামের উপর ডিসকাউন্ট নির্ধারণ করবেন কীভাবে?
ডিসকাউন্ট দিতে গিয়ে লোকসান যেন না হয়, তাই ডিসকাউন্ট বের করার নিয়ম জানা জরুরি। কয়েকটি ধাপে পণ্যের দামের উপর ডিসকাউন্ট নির্ধারণ করা শিখে নিন।
ধাপ ১: কস্ট প্রাইস (কেনার খরচ) নির্ধারণ
প্রথমে হিসেব করুন একটি পণ্য বানাতে বা কিনতে আপনার খরচ কত পড়েছে। যেমন- আপনি যদি একটি জামা ৫০০ টাকায় কিনে থাকেন, সেটাই কস্ট প্রাইস।
ধাপ ২: প্রফিট মার্জিন নির্ধারণ
ধরুন আপনি ৩০% লাভ করতে চান, তাহলে বিক্রয়মূল্য হবে = ৫০০ + (৩০% × ৫০০) = ৬৫০ টাকা।
ধাপ ৩: ডিসকাউন্ট ক্যালকুলেশন
আপনি যদি ১০% ডিসকাউন্ট দিতে চান, তাহলে বিক্রয়মূল্য হবে = ৬৫০ – (১০% × ৬৫০) = ৫৮৫ টাকা। আবার আপনি নির্দিষ্ট একটি অ্যামাউন্টও ডিসকাউন্ট দিতে পারেন। যেমন- প্রতি জামায় ১০০ টাকা ছাড়।
ধাপ ৪: লাভ আছে কিনা যাচাই করুন
ডিসকাউন্টের পর বিক্রয়মূল্য কস্ট প্রাইসের চেয়ে বেশি হলে আপনি এখনো লাভে আছেন।
এই প্রক্রিয়া ধরে এগোনোর সময় তিনটি টিপস মাথায় রাখবেন-
- প্রথমেই কস্ট প্রাইস জানুন।
- অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেবেন না। কাস্টমার সন্দেহ করতে পারে!
- ডিসকাউন্ট অফারের সময়সীমা দিন। না হলে খেলো হয়ে যাবেন বা দাম পারেন না!
- লাভ নিশ্চিত করতে সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। আবার লেনদেনে ডিসকাউন্ট সহজে হিসাব করতেও হিসাবরক্ষণ অ্যাপ ব্যবহার করুন।
হিসাবপাতি অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনে ডিসকাউন্ট হিসাব করুন সহজে!
ডিসকাউন্ট নির্ধারণ কৌশল বাস্তবায়নে ভুল হলে লাভের বদলে লোকসান হতে পারে। তাই লেনদেনের প্রতিটি হিসাব যেন সঠিক থাকে, সেজন্য ব্যবহার করুন হিসাবপাতি অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি সহজেই পণ্যের কস্ট প্রাইস, লাভের মার্জিন এবং ডিসকাউন্ট হিসাব করতে পারবেন। এতে ব্যবসার খুঁটিনাটি লেনদেন থাকবে আপনার হাতে, একদম স্পষ্টভাবে এবং রিয়েল টাইম। ফলে ডিসকাউন্ট অফার দেওয়ার আগে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন কোন অফার কতটা লাভজনক।
ডিসকাউন্ট কখন ফ্লপ হয় আর কখন হিট হয়?
ডিসকাউন্ট অফার ফ্লপ হয় যখন:
- পণ্যের গুণগত মান খারাপ থাকে।
- ডিসকাউন্ট অফার গ্রাহককে ঠিকভাবে জানানো না হয়।
- অফার সীমাহীন সময়ের জন্য থাকে, যার ফলে আকর্ষণ হারায়।
- প্রতিযোগীরা একই পণ্যে আরও ভালো অফার দেয়।
ডিসকাউন্ট অফার হিট হয় যখন:
- সীমিত সময়ের আকর্ষণীয় অফার থাকে।
- সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারণা ভালো হয়।
- পণ্যের দামের সাথে পণ্যের মানও ভালো হয়।
- অফারের শর্তাবলী পরিষ্কার ও সহজবোধ্য হয়।
- উৎসব, বিশেষ দিবস বা সিজনাল প্রয়োজনের সাথে মিলিয়ে অফার দেওয়া হয়। যেমন- বর্ষায় ছাতা ও রেইনকোটে অফার দিলে ভালো চলে।
এক কথায়, ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার হিট করতে হলে পরিকল্পনা থাকতে হবে। শুধু ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার দিলেই হবে না, তাকে ‘স্মার্ট ডিসকাউন্ট’ করতে হবে।
ব্যবসায় ডিসকাউন্ট অফার হলো একটি শক্তিশালী কৌশল, যা ব্যবসার বিকাশে গতি আনতে পারে। ডিসকাউন্ট কি লাভজনক? তা নির্ভর করে আপনি কীভাবে কৌশলটি কাজে লাগাচ্ছেন তার ওপর। অপ্রয়োজনীয় অফার না দিয়ে টার্গেটেড ও সময়োপযোগী ডিসকাউন্ট দিন। তবেই আপনি পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ফল।
ডেমো দেখে সহজ তিনটি ধাপে হিসাবপাতি’তে যাত্রা শুরু করুন!
- ১ম ধাপ- হিসবাপাতি’তে সাইন আপ করুন:
প্রথমেই হিসাবপাতি’র ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার ব্যবসার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। অথবা ব্যবসা পরিচালনাকে সহজ করতে আজই ফ্রিতে ডাউনলোড করে ইন্সটল করুন- ‘হিসাবপাতি’
এরপরেই রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন। হিসাবপাতি’তে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং এটি সম্পূর্ণ ফ্রি!
- ২য় ধাপ- আপনার কোম্পানি সেট-আপ করুন:
সাইন আপ করে প্রথমেই মালিক হিসেবে আপনার কোম্পানির প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ব্যবসার প্রোফাইল সেট-আপ করুন। তারপর ইনভেনটরি থেকে শুরু করে ইউনিট, ক্রয়-বিক্রয়, বাকি বকেয়া, ইনভয়েস এবং লেনদেন সহ ব্যবসার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সেট-আপ করুন। এরপর শুরু করুন প্রতিদিনের লেনদেন আপডেট রাখার কাজ।
- ৩য় ধাপ- হিসাবপাতি’র বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করুন:
হিসাবপাতি’তে ব্যবসার হিসাব রাখা শুরু করার পরে, প্রয়োজনীয় এবং ইউনিক ফিচারগুলো ব্যবহার করতে থাকুন। যেমন- ইনভয়েস, বারকোড স্ক্যানার, ইউনিট, ব্যয় ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। হিসাবপাতি’র ব্যবহারবিধি ও ফিচারের বিস্তারিত বুঝতে ইউটিউবে বাংলায় ডেমো ভিডিও দেখুন।
জমা খরচের ডিজিটাল খাতা- হিসাবপাতি’র ডেমো
হিসাবপাতি সহজ ও সাশ্রয়ী হিসাবরক্ষণ অ্যাপ। এর সাবস্ক্রিপশন ফি বিভিন্ন মেয়াদে এবং সুলভ প্যাকেজে ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে। হিসাবপাতি’র সকল প্যাকেজের মূল্য ও ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আজই বেছে নিন আপনার পছন্দের প্যাকেজটি! আপনার ব্যবসার জন্য শুভকামনা!